বাংলাদেশে ভেপিং নিষিদ্ধ করা হলে ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হবে। অনেকে ভেপিংকে ধূমপানের আসক্তি কাটানোর সহায়ক উপায় হিসেবে গ্রহণ করেছে। ভেপিং নিষিদ্ধ করা হলে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শুক্রবার (২ আগস্ট) ‘সেইভ ভেপিং, সেইভ বাংলাদেশ’ শিরোনামের এক ওয়েবিনারে বিশ্লেষজ্ঞ ও খাত-সংশ্লিষ্ট আলোচকেরা এই শঙ্কা প্রকাশ করেন।
ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন (২০০৫) সংশোধন করতে প্রস্তুত করা খসড়ায় তুলনামূলক নিরাপদ ভেপিং, ইলেক্ট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম ও ধূমপানের অন্যান্য বিকল্প নিষিদ্ধের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই বাংলাদেশ-ভিত্তিক ভয়েস অব ভেপারস এই ওয়েবিনারের আয়োজন করে।
ধূমপানের ক্ষতিহ্রাস বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং হেলথ ডিপ্লোমেটস-এর প্রেসিডেন্ট ডা. ডিলন হিউম্যান বলেন, ভেপিংকে ধূমপানের চেয়েও বেশি ক্ষতিকর হিসেবে উল্লেখ করে যে বক্তব্য বাংলাদেশের জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল হাজির করছে তার স্বপক্ষে কোনো গবেষণালব্ধ প্রমাণ নেই। বরং ইউকে হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সির (পূর্বের পাবলিক হেলথ অব ইংল্যান্ড) গবেষণায় ভেপিং সাধারণ সিগারেটের তুলনায় ৯৫ শতাংশ কম ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। এমন গবেষণা ও বাস্তবতা আমলে না নিয়ে বাংলাদেশে ভেপিংকে তামাকজাত পণ্যের সঙ্গে মিলিয়ে তা নিষিদ্ধের করা হচ্ছে ভুলভাবে।
হিউম্যান বলেন, যুক্তরাজ্যের রয়্যাল কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স, ইউরোপিয়ান অ্যাডিকশন রিসার্চ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যাকাডেমিকস অব সায়েন্সে, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড মেডিসেনের গবেষণাতেও ভেপিং প্রচলিত সিগারেটের তুলনায় অনেক নিরাপদ বলে প্রমাণিত হয়েছে।
তামাকের ক্ষতিহ্রাস বিষয়ক এই বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এই লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের প্রয়োজন উন্নত বিশ্বে সাফল্য লাভ করেছে এমন নির্ভরযোগ্য ও পরীক্ষিত ঝুঁকিহ্রাস কৌশল অনুসরণ করা। কর্তৃপক্ষের উচিত ধূমপান ছাড়তে চায় এমন ব্যক্তিদের জন্য নিরাপদ বিকল্প নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে ভেপিংকে নিষিদ্ধ করার পরিবর্তে নীতিমালার আওতায় এনে ভোক্তাদের জন্য ধূমপানের নিরাপদ বিকল্পের ব্যবস্থা করা কাম্য।
অনুষ্ঠানে ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি সুমন জামান বলেন, অনেক ধূমপায়ী ভেপিংকে ধূমপানের আসক্তি কাটানোর সহায়ক উপায় হিসেবে গ্রহণ করেছে। ভেপিং নিষিদ্ধ করা হলে তাঁদের ওপর এই পদক্ষেপের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। যারা ধূমপান ছেড়ে আরও বেশি স্বাস্থ্য সম্মত জীবনযাপন করতে চান তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
তিনি ভেপিং নিষিদ্ধের প্রস্তাব পূর্ণবিবেচনা এবং এই সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে সকল অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানান।
যুক্তরাজ্যের ভেপিং ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের মহাপরিচালক জন ডান বলেন, ভেপিং ও প্রচলিত সিগারেট একই ধরনের পণ্য নয়। ফলে ভেপিংকে সিগারেটর তুলনায় আলাদাভাবে বিবেচনা করতে হবে, আলাদা নীতিমালার আওতায় আনতে হবে।
তিনি বলেন, ভেপিংকে নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি হিসেবে ব্যবহার করে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, নিউজিল্যান্ড এবং কানাডা সাফ্যল পেয়েছে। সেখানে ধূমপায়ীর হার কমেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। ভেপিং নিষিদ্ধ করা হলে বরং ধূমপান ছাড়ার হার কমে যাবে।
ওয়ার্ল্ড ভেপার অ্যালায়েন্সের পরিচালক মাইকেল ল্যান্ডল বলেন, বিভিন্ন উপাত্তে দেখা গেছে, ভেপিংয়ের সহজলভ্যতা বন্ধ করা হলে ভোক্তারা ফের প্রচলিত ধূমপানে ফিরে যায়। বাংলাদেশের উচিত তামাক সংক্রান্ত নীতিমালায় ভিন্ন আরেকটি অধ্যায় সংযুক্ত করা, যেখানে তামাকের ক্ষতিহ্রাস রূপরেখা সন্নিবেশিত হবে। অন্যান্য দেশের সাফল্য এবং কার্যকর পদ্ধতিগুলোর আলোকে এতে তুলনামূলক নিরাপদ বিকল্প পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ, করকাঠামো, ঝুঁকিহ্রাসের বিষয়গুলোর বিবরণ থাকবে।
সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান ডা. মিথুন আলমগীর বলেন বাংলাদেশে ভেপিং নিষিদ্ধ করা হলে ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হবে। ভেপিং নিষিদ্ধ করা হলে বাংলাদেশের ধূমপান আরও বাড়বে।