ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ (২০১৩ সালে সংশোধিত) এর পুনরায় সংশোধনের খসড়ায় ভেপিং নিষিদ্ধের জন্য আনা প্রস্তাব বাতিলের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন (বেন্ডস্টা)।
সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানিয়ে বলা হয়, দেশে ভেপিং নিষিদ্ধ করা হলে অনেকে আবারও প্রচলিত সিগারেটে ফিরে যাবে। এতে ধূমপায়ীর সংখ্যা হ্রাসের পরিবর্তে বরং বেড়ে যাবে। সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে ধূমপানমুক্ত করার যে লক্ষ্য তা বাধাগ্রস্ত হবে।
সম্প্রতি ভেপিং নিষিদ্ধ করে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ পুনরায় সংশোধনের খসড়া তৈরি করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যেখানে ই-সিগারেট বা এর যন্ত্রাংশ বা অংশ-বিশেষ উৎপাদন, আমদানি, রপ্তানি, সংরক্ষণ, ক্রয়-বিক্রয় ও পরিবহন নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব রয়েছে।
এমন উদ্যোগের প্রেক্ষিতে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়া থেকে ভেপিং পণ্য তথা ইলেক্ট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেমকে বাদ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বেন্ডস্টার সভাপতি মাসুদ উজ জামান। তামাকজাত দ্রব্যের সাথে ভেপিং, ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেমকে ভুলভাবে এক কাতারে ফেলা হয়েছে। অথচ এগুলো ধূমপান ও তামাকজাত অন্য পণ্যের আসক্তি কাটাতে সবচেয়ে কার্যকর উপায় বা “কুইটিং টুল” হিসেবে স্বীকৃত এবং অন্যান্য প্রচলিত তামাকজাত দ্রব্যের থেকে সম্পূর্ণরূপে আলাদা।
ভেপিং সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা এবং তামাক পণ্য ও ভেপিং–এই দুইটিকে আলাদা পণ্য হিসেবে বিবেচনার দাবি জানান তাঁরা।
তিনি বলেন,‘ইউকে হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সির (পাবলিক হেলথ অব ইংল্যান্ড) গবেষণায় বলা হয়েছে ভেপিং সাধারণ সিগারেটের তুলনায় ৯৫ শতাংশ কম ক্ষতিকর। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার, স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত কোন গবেষণা পর্যালোচনা না করে এবং সংশ্লিষ্ট অংশিজনের সঙ্গে আলোচনা না করে ভেপিং নিষিদ্ধের প্রস্তাব করছেন।’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগের প্রশংসা করে মাসুদ বলেন, দেশকে ধূমপানমুক্ত করার উদ্যোগ সহায়ক হতে পারে ভেপিং। কারণ বিভিন্ন গবেষণা উঠে এসেছে ধূমপান ছাড়তে কার্যকর উপায় হিসেবে ভেপিং একটি স্বীকৃত মাধ্যম।
মাসুদ জামান আরো বলেন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াভিত্তিক কনজুমার চয়েস সেন্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যের পদ্ধতি অনুসরণ করে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ভেপিংকে উৎসাহিত করা গেলে বাংলাদেশে ৬২ লাখের বেশি ধূমপায়ী প্রচলিত সিগারেট ছেড়ে দিবে। ইতিমধ্যে দেশের চার হাজার ভেপার সম্প্রতি ভেপিংকে ধূমপান ছাড়ার ক্ষেত্রে কার্যকর উপায় হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য পিটিশনে সাক্ষর করেছেন।
যুক্তরাজ্য, কানাডা, নিউজিল্যান্ড এবং উপরের বিভিন্ন দেশে ধূপমান ছাড়ার সহায়ক উপায় হিসেবে ভেপিংয়ের পরামর্শ দেওয়া হয়। এই সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করে তারা সফলতা পাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের (ইউএস–এফডিএ) ভেপিং পণ্য বাজারজাত করার অনুমোদন দিয়েছে। এমন গবেষণা ও বাস্তবতা আমলে না নিয়ে বাংলাদেশে ভেপিং নিষিদ্ধের ভুল পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে মত মাসুদ উজ জামান।
তিনি বলেন, ‘বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য মতে, দেশে ২০১০ সালে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশ ছিলো, যা ২০২২ সালে এসে ৩৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এমন বাস্তবতায় ভেপিং নিষিদ্ধ করা হলে ধূমপায়ীর হার ফের বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা সৃষ্টি হবে। কারণ যারা ভেপিয়েংর সাহায্যে ধূমপান ছাড়ছে, তাদের প্রচলিত সিগারেটে ফিরে যাওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প থাকবে না।’ সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে ধূমপানমুক্ত করার যে লক্ষ্য তা বাধাগ্রস্ত হবে।