ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ সংশোধনের খসড়ায় ভেপিং নিষিদ্ধের জন্য আনা প্রস্তাব বাতিলের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন (বেন্ডস্টা)।
গতকাল সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানিয়ে সংগঠনটির পক্ষে বলা হয়, দেশে ভেপিং নিষিদ্ধ করা হলে অনেকে আবারও প্রচলিত সিগারেটে ফিরে যাবে। এতে ধূমপায়ীর সংখ্যা হ্রাসের পরিবর্তে বরং বেড়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে ধূমপানমুক্ত করার যে লক্ষ্য তা বাধাগ্রস্ত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সম্প্রতি ভেপিং নিষিদ্ধ করে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ ফের সংশোধনের খসড়া তৈরি করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এতে ই-সিগারেট বা এর যন্ত্রাংশ বা অংশবিশেষ উৎপাদন, আমদানি, রপ্তানি, সংরক্ষণ, ক্রয়-বিক্রয় ও পরিবহন নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব রয়েছে।
এ বিষয়ে বেন্ডস্টার সভাপতি মাসুদ উজ জামান বলেন, তামাকজাত দ্রব্যের সঙ্গে ভেপিং, ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেমকে ভুলভাবে এক কাতারে ফেলা হয়েছে। অথচ এগুলো ধূমপান ও তামাকজাত অন্য পণ্যের আসক্তি কাটাতে সবচেয়ে কার্যকর উপায় বা ‘কুইটিং টুল’ হিসেবে স্বীকৃত এবং অন্যান্য প্রচলিত তামাকজাত দ্রব্যের থেকে সম্পূর্ণরূপে আলাদা।
তিনি বলেন, ‘ইউকে হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সির (পাবলিক হেলথ অব ইংল্যান্ড) গবেষণায় বলা হয়েছে, ভেপিং সাধারণ সিগারেটের তুলনায় ৯৫ শতাংশ কম ক্ষতিকর। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এসংক্রান্ত কোনো গবেষণা পর্যালোচনা না করে এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা না করে ভেপিং নিষিদ্ধের প্রস্তাব করছে। ’
মাসুদ জামান আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াভিত্তিক কনজ্যুমার চয়েস সেন্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যের পদ্ধতি অনুসরণ করে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ভেপিংকে উৎসাহিত করা গেলে বাংলাদেশে ৬২ লাখের বেশি ধূমপায়ী প্রচলিত সিগারেট ছেড়ে দেবে। এরই মধ্যে দেশের চার হাজার ভেপার সম্প্রতি ভেপিংকে ধূমপান ছাড়ার ক্ষেত্রে কার্যকর উপায় হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আবেদনে সই করেছেন। যুক্তরাজ্য, কানাডা ও নিউজিল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে ধূপমান ছাড়ার সহায়ক উপায় হিসেবে ভেপিংয়ের পরামর্শ দেওয়া হয়। এসংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করে তারা সফলতা পাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসনের (ইউএসএফডিএ) ভেপিং পণ্য বাজারজাত করার অনুমোদন দিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের তথ্য মতে, দেশে ২০১০ সালে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশ ছিল, যা ২০২২ সালে এসে ৩৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এমন বাস্তবতায় ভেপিং নিষিদ্ধ করা হলে ধূমপায়ীর হার ফের বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ যারা ভেপিংয়ের সাহায্যে ধূমপান ছাড়ছে, তাদের প্রচলিত সিগারেটে ফিরে যাওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প থাকবে না। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে ধূমপানমুক্ত করার যে লক্ষ্য তা বাধাগ্রস্ত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বেন্ডস্টা নেতারা ভেপিংসংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা এবং তামাক পণ্য ও ভেপিং এই দুটিকে আলাদা পণ্য হিসেবে বিবেচনার দাবি জানান।