ধূমপানের আসক্তি কমাতে বিশ্বজুড়ে হয়েছে নানা গবেষেণা। ভেপিং ধূমপানের আসক্তি এবং ক্ষতি কমানোর অন্যতম কার্যকর একটি উপায় মনে করা হয়। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন গবেষণায় ধূমপানের চেয়ে ভেপিংকেই নিরাপদ বলা হয়। তবে ধূমপান ও তামাকজাত পণ্য ব্যবহারের ক্ষতি কমানোর অন্যতম সহায়ক ভেপিং নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ও নেতিবাচক প্রচারণাও চলছে সমান তালে। এসব নেতিবাচক প্রচারণার কারণে মধ্যম ও স্বল্প আয়ের দেশগুলোতে ধূমপানের ক্ষতি উল্লেখযোগ্য হারে কমানো যাচ্ছে না বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
মধ্যম ও স্বল্প আয়ের বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সম্প্রতি ধূমপান এবং তামাকজাত পণ্যের ক্ষতি নিরসন নিয়ে দুই দিনের ভার্চুয়াল বৈশ্বিক সংলাপে বসেছিলেন। এতে ভারত, মেক্সিকো, কেনিয়া ও ইউক্রেনের আলোচকরা তাঁদের নিজ নিজ দেশে ভেপিং নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা এবং ওই সব দেশের সরকারের ভুল নীতির প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন।
ভারতের জনস্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষক শ্রী সুচরিতার মতে, ভেপিং ও তামাকের ঝুঁকি কমানোর এমন অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে সচেতনতার ঘাটতি ভারতেও রয়েছে। এ ছাড়া ভুল নীতির কারণে ভারতের বাজারে ভেপিং অপ্রতুল। ফলে ধূমপায়ীরা আসক্তি কমাতে এবং কম ক্ষতিকর বিকল্পের দিকে ঝুঁকতে চাইলেও পারছে না।
ইউক্রেনের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ নাতালিয়া তারাপোভা রাশিয়া, জর্জিয়া, কাজাখস্তান, ইউক্রেনসহ আশপাশের বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য সুরক্ষাসংক্রান্ত পদক্ষেপ বিষয়ে খোঁজখবর রাখেন। তিনি জানান, ধূমপানসংক্রান্ত জটিলতায় রাশিয়ায় প্রতিবছর প্রায় সোয়া দুই লাখ লোক মারা যায়। এর পরও সেখানে ধূমপানের ঝুঁকি কমানোর কোনো উদ্যোগ নেই। উল্টো রয়েছে ভ্রান্ত ধারণা। রাশিয়া, জর্জিয়া, কাজাখস্তান, ইউক্রেনসহ আশপাশের বিভিন্ন দেশে ধূমপান এবং ভেপিংকে গুলিয়ে ফেলা হয়। কোনো রকম গবেষণা ছাড়া প্রচলিত সিগারেট এবং ভেপিংকে সমমাত্রায় ক্ষতিকারক বলে মনে করা হয়। মূলত সঠিক তথ্যের অভাবে এমন ভুল ধারণা করা হয় বলে মনে করেন নাতালিয়া।
কেনিয়ায় তামাকজাত পণ্যের ক্ষতি কমাতে আন্দোলন করছেন জোসেফ মাগেরো। তাঁর মতে, ধূমপান ও তামাকের ঝুঁকি কমানো প্রধান অন্তরায় নীতিমালার গলদ। ভ্রান্ত তথ্য ও গবেষণা ছাড়াই এমন সব নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়, যা ধূমপানের ক্ষতি কমাতে কোনো সহায়ক ভূমিকা রাখে না।
মেক্সিকোর আইনজীবী টোমাস ও গোরম্যান ভার্চুয়াল সংলাপে অংশ নিয়ে বলেন, বিভিন্ন বৈশ্বিক সংস্থা ভেপিং নিয়ে ভ্রান্ত তথ্য ছড়াচ্ছে। এই নেতিবাচক প্রচারণার কারণে মানুষ সঠিক তথ্য জানতে পারছে না। মেক্সিকোর উদাহরণ টেনে টোমাস বলেন, কোনো গবেষণা ও উপাত্ত ছাড়াই সেখানে ১০ বছর ধরে ভেপিং নিষিদ্ধ। ক্রমাগত বিভ্রান্তিকর প্রচারণার কারণে আইন প্রণেতারাও ভুল নীতিমালা পাস করছেন।
আলোচকরা বলেন, ফিলিপাইন একটি ইতিবাচক উদাহরণ। সেখানে কর্তৃপক্ষ গবেষণা আমলে নিয়ে ধূমপান ছাড়ার জন্য ভেপিংসহ অন্যান্য ঝুঁকি কমানোর সামগ্রীর অনুমোদন দিচ্ছে। সূত্র : ম্যানিলা বুলেটিন।