ভেপিং নিয়ে বিভ্রান্তির মূলে ভুল তথ্য। গবেষণালব্ধ তথ্য আমলে না নিয়ে ধারণা নির্ভর তথ্যের ভিত্তিতে ভেপিংকে মূল্যায়ন করা হলে তা বরং ক্ষতি ডেকে আনবে। ধূমপান হ্রাসের কার্যকর এই মাধ্যমকে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে ব্যবহারে মিলবে সুফল। শনিবার (২৯ মে) বিশ্ব ভেপিং দিবসে উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনায় এইসব বার্তা উঠে এলো। ভেপিং সম্পর্কে ভুল ধারণা ভেঙে দিতে বাংলাদেশে এ দিবস উদযাপন করেছে ভেপার কমিউনিটি।
বাংলাদেশে এই বছরে দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘সুইচ টু হেলদি লাইফ’। এই আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশে ভেপারসরা তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। ধূমপানের আসক্তি কাটাতে ভেপিংয়ের কার্যকরিতার কথা তুলে ধরেন। সমাজের বিভিন্ন স্তরের বিভিন্ন পেশায় থাকা ভেপারসদের নিয়ে ফেসবুকভিত্তিক ভয়েস অব ভেপারস এই দিবসটি উদযাপন করে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সংগীতশিল্পী হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল বলেন, তিনি ধূমপায়ী ছিলেন। ২০১১ সালে অসুস্থ হওয়ার পর যুক্তরাজ্য ও থাইল্যান্ডের চিকিৎসকেরা তাকে ধূমপান করতে বারণ করেন। পরামর্শ দেন, যদি একান্ত প্রয়োজন পড়ে তবে ভেপিং করতে পারেন। চিকিৎসকদের পরামর্শে ধূমপান ছেড়ে ভেপিং শুরু করেন এই সংগীতশিল্পী এবং এখন আগের তুলনায় অনেক সুস্থবোধ করছেন বলে উল্লেখ করেন।
আয়োজকরা বলেন, পাবলিকে হেলথ ইংল্যান্ডের গবেষণানুযায়ী, প্রচলিত সিগারেটের তুলনায় ভেপিং ৯৫ শতাংশ নিরাপদ। কারণ ভেপিং মূলত নিকোটিন নির্ভর। যা প্রচলিত সিগারেটের মতো সাত হাজার অন্যান্য রাসায়নিক থাকে না। এই পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস ধূমপান ছাড়ার জন্য ভেপিং ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছে।
ভয়েস অব ভেপারসের অন্যতম উদ্যোক্তা ইশরাক ঢালি বলেন, তাদের এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য দেশের সকল ভেপারদের একত্রিত করা যাতে করে তারা তাদের বক্তব্য আরও স্পষ্ট ও দৃঢ়ভাবে তুলে ধরতে পারেন।
এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের প্রধান প্রফেসর মিথুন আলমগীরে মতে, ধূমপান বিশ্বের জন্য ’নীরব মহামারী’। এর থেকে মুক্তির অন্যমত কার্যকর হাতিয়ার হতে পারে ভেপিং। এটি মূলত নিকোটিন নির্ভর। তিনি বলেন, প্রচলিত সিগারেটে নিকোটিনের পাশপাশি টার, কার্বন মনোক্সাইডসহ বিভিন্ন রাসায়নিকের উপস্থিতি থাকে। এগুলো মিশ্রণে শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর উপাদান তৈরি হয়। তবে, এককভাবে নিকোটিন অনেক কম ক্ষতিকর। তাই প্রচলিত সিগারেটের তুলনায় ভেপিং অনেকটাই নিরাপদ।
বাংলাদেশ ইলেকট্রিনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সুমন জামান বলেন, ভেপিংয়ের বিকাশের ক্ষেত্রে প্রধান বাঁধা বিভ্রান্তিকর তথ্য। তা প্রতিষ্ঠানিক পর্যায় এবং ব্যক্তি পর্যায় থেকেও ছড়াচ্ছে। এর ফলে প্রচলিত সিগারেট এবং ভেপিংকে এক কাতারে ফেলা হচ্ছে। তবে, বাস্তবতা হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদী ধূমপানে শরীরের যে ক্ষতি হয় ভেপিংয়ে তেমনটা হয় না।
তিনি বলেন, ভেপিংয়ের মূল কাজ হলো ধূমপানের আসক্তি থেকে মানুষকে সরিয়ে আনা। তবে এই প্রযুক্তি নিষিদ্ধ করা হয় তবে দেশকে তামাকমুক্ত করার উদ্যোগ বাঁধাগ্রস্ত হবে এবং ভেপিং ব্যবসাটা কালোবাজারে চলে যাবে। নিম্নমানের পণ্য বরং তখন আরও ক্ষতির কারণ হবে স্বাস্থ্যের জন্য।