টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এসডিজি) যে ১৬৯টি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তার মধ্যে তামাকের ভয়াবহতা বিবেচনায় বিশ্ব স্বাস্ব্য সংস্থার আন্তর্জাতিক তামাক নিয়ন্ত্রণ চুক্তি-এফসিটিসি বাস্তবায়ন অন্যতম। এফসিটিসির অন্যতম উদ্দেশ্য তামাকের ব্যবহার এবং তামাকজাত পণ্যের ধোঁয়ার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে নিরাপদ রাখা।
এই লক্ষ্যমাত্র অর্জনে বৈজ্ঞানিকভাবে কার্যকর ও অন্যতম সহায়ক হতে পারে ভেপিং। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, তামাক ও প্রচলিত সিগারেটে আসক্তি কাটাতে ভেপিং কার্যকর এবং বহুলাংশে নিরাপদ। এফসিটিসি বাস্তবায়ন ছাড়া এসডিজির তৃতীয় লক্ষ্যমাত্রা ‘স্বাস্থ্যসম্মত জীবনমান নিশ্চিতকরণ এবং সব বয়সের সকলের জন্য সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা’ দূরহ। এসডিজির অন্যান্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও তামাক একটা বড় ধরনের বাঁধা, যা এফসিটিসি বাস্তবায়নের মাধ্যমেই অপসারণ করতে হবে বলে মত স্বাস্থ্যখাতের বিশেষজ্ঞদের।
আন্তর্জাতিক তামাক নিয়ন্ত্রণ চুক্তিতে বৈজ্ঞানিক এবং আর্থিক কার্যকারিতা বিবেচনায় তামাক নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ডের তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির প্রধান মার্টিন ডকরেল বলেন, ধূমপান নিরুৎসাহিত করে এবং এর পরিবর্তে ভেপিং উৎসাহিত করে এমন নীতি গ্রহণ করলে বাড়ি এবং প্রতিবেশ সহজে ধূমপানমুক্ত করা সম্ভব।
তামাক ও তামাকজাত পণ্যের আর্থিক ক্ষতি নিয়ে বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি, আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি, ক্যান্সার রিসার্চ ইউকে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ যৌথভাবে এ গবেষণা পরিচালনা করে। ২০১৯ সালে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু তামাক ব্যবহারজনিত আর্থিক ক্ষতি বছরে ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জাতীয় আয়ের (জিডিপি) ১ দশমিক ৪ শতাংশ। আর ২০১৮ সালে তামাকজনিত রোগে প্রায় এক লাখ ২৬ হাজার মানুষের অকালমৃত্যু হয়, যা দেশের মোট মৃত্যুর ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ।
এমন প্রেক্ষাপটে ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার ক্ষেত্রে অন্যতম সহায়ক উপায় হতে পারে ভেপিং। তামাক থেকে সৃষ্ট স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবিলায় গবেষণালব্ধ তথ্য ও বৈজ্ঞানিক পরিকল্পনা অনুযায়ী অগ্রসর হতে হবে। প্রচলিত ভাবনায় কেবল তামাক বা তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই প্রত্যাশিত ফল আসবে না। কারণ এই পন্থায় গেল বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্য তেমন সাফল্য পাওয়া যায়নি। বৈশ্বিক বাস্তবতা থেকেও দেখা যায়, তামাকের ব্যবহার হ্রাসে সফল ভেপিং। যুক্তরাজ্য, কানাড, ফ্রান্স, নিউজিল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের গবেষণায় দেখা গেছে ধূমপানের আসক্তি কাটাতে কার্যকর ভেপিং । ফ্রান্সে ভেপিং ব্যবহারের মাধ্যমে সাত লাখ মানুষ ধূমপান ছাড়তে সফল হয়েছেন। কানাডা এবং নিউজিল্যান্ডেও চিত্র প্রায় অনুরূপ।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, নিউজিল্যান্ড এবং কানাডার এক যৌথ বিশ্লেষণে ধূমপান হ্রাসের ভেপিংয়ের কার্যকারিতার এই তথ্য উঠে এসেছে। প্রোপার্টি রাইট অ্যালায়েন্সের এই বিশ্লেষণে দেশ চারটির গবেষকেরা তাদের দেশে ভেপিংয়ের কার্যকারিতার বিবরণ তুলে ধরেন।
ভারতের দিল্লি মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ডা. গিরিস তিয়াগীর মতে, জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে তুলনামূলক কম ক্ষতিকর বিকল্প হাজির করে ঝুঁকি হ্রাস করা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। যেমন সুঁই দিয়ে মাদক নেওয়ার কারণে ব্যক্তির এবং তাঁর যৌন সম্পর্ক স্থাপনকারী অন্যদেরও এইসড সংক্রমণের শঙ্কা থাকে। ঝুঁকি হ্রাসে কনডম ব্যবহারসহ বিকল্প পদ্ধতির ব্যবস্থা উদ্ভাবন করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তামাক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও এমন বিকল্প ও তুলনামূক কম ঝুঁকির কথা বিবেচনায় রাখতে হবে।